বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:২০ পূর্বাহ্ন

ল্যুভর জাদুঘরে সিনেমাটিক চুরি, ৪ মিনিটে উধাও বহুমূল্যের ৮ রত্নালঙ্কার

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অবস্থিত বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত জাদুঘর ল্যুভরে এক সিনেমাটিক চুরির ঘটনা ঘটেছে। রবিবার দিনের আলোয় কাজের লোক সেজে জাদুঘরে ঢুকে নেপোলিয়ন যুগের আটটি মূল্যবান রত্নালঙ্কার নিয়ে পালিয়েছে একদল চোর। ঘটনাটি এতটাই পরিকল্পিত ও দ্রুতগতির ছিল যে অনেকেই বলছেন, এ যেন বাস্তব না, হলিউড সিনেমার দৃশ্য!

স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পর্যটকে ঠাসা ল্যুভর জাদুঘরে চোরের দল ভাঁজ করা একটি মই ব্যবহার করে জানালা ভেঙে প্রবেশ করে। শ্রমিকের পোশাকে থাকা অপরাধীরা অ্যাপোলো গ্যালারিতে ঢুকে মাত্র চার মিনিটে উচ্চ নিরাপত্তা কাঁচ ভেঙে আটটি অমূল্য রত্নালঙ্কার নিয়ে মোটরসাইকেলে পালিয়ে যায়।

পালানোর সময় ভয়ে বা তাড়াহুড়োয় তারা সম্রাজ্ঞী উজিনির একটি মূল্যবান মুকুট বাইরে ফেলে রেখে যায়। সেটিতে এক হাজার ৩৫৪টি হীরা ও ৫৬টি পান্না রয়েছে। চুরির সময় সেটির ক্ষতি হয়েছে।

যা যা চুরি হয়েছে
ফ্রান্সের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে যে চুরি হওয়া অলঙ্কারগুলোর মধ্যে রয়েছে- নেপোলিয়ন বোনাপার্টের স্ত্রী সম্রাজ্ঞী মেরি-লুইজের পান্না বসানো নেকলেস ও কানের দুল, সম্রাজ্ঞী উজিনির হীরা বসানো টিয়ারা, ‘রিলিকোয়ারি’ নামে পরিচিত দুষ্প্রাপ্য ব্রোচসহ মোট আটটি রাজকীয় রত্নালঙ্কার।

প্রতিটি অলঙ্কারই কয়েকশ’ বছর পুরোনো এবং বিপুল সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে। মূল্যবান শিল্পকর্ম চুরি বিশেষজ্ঞ এবং ‘স্টিলিং রেমব্রান্টস: দ্য আনটোল্ড স্টোরিজ অব নটোরিয়াস আর্ট হিস্টস’ বইয়ের সহলেখক অ্যান্থনি আমোরে বলেন, এসব বস্তু শুধু অর্থের দিক দিয়েই মূল্যবান নয়, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের দিক থেকেও অমূল্য।

এ ঘটনার পরপরই ল্যুভর জাদুঘর ‘বিশেষ পরিস্থিতি’র কথা বলে দিনভর বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পুলিশ পুরো এলাকা ঘিরে তদন্ত শুরু করেছে।

জাদুঘরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। এমন কড়া নিরাপত্তার মধ্যেও দিনের আলোয় কয়েক মিনিটে এমন চুরি সম্ভব হতে পারে, এটি অকল্পনীয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। 

পরিকল্পিত নাকি পেশাদার অপরাধচক্রের কাজ?

ফরাসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লঁরা নুনেজ এ ঘটনাকে ‘অত্যন্ত পেশাদার চুরি’ বলেছেন। চোরেরা বৈদ্যুতিক যন্ত্র, অ্যাঙ্গেল গ্রাইন্ডার, মইসহ প্রস্তুত হয়ে এসেছিল। ধারণা করা হচ্ছে, এতে আন্তর্জাতিক চোরাচালান চক্র জড়িত থাকতে পারে।

অ্যান্থনি আমোরে বলেন, “সম্ভবত এসব রত্ন ভেঙে আলাদা পাথর হিসেবে কালোবাজারে বিক্রি করা হবে, যাতে সেগুলোর উৎস শনাক্ত করা না যায়। ”

ফরেনসিক দল ঘটনাস্থল থেকে প্রমাণ সংগ্রহ করছে। সিসিটিভি বিশ্লেষণ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের শুরু হয়েছে জিজ্ঞাসাবাদ। তবে এখনও কোনও চোর বা চুরি যাওয়া বস্তু উদ্ধার হয়নি।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, “এটি আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ওপর নির্মম আঘাত। অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে যা কিছু প্রয়োজন, আমরা তা করব। ”

এর আগে ১৯১১ সালে ল্যুভর থেকে বিখ্যাত চিত্রকর্ম ‘মোনালিসা’ চিত্রকর্ম চুরি হয়, যা দুই বছর পর উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল। এবারের চুরিও দেশটির ইতিহাসে অন্যতম বড় সাংস্কৃতিক অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

নিরাপত্তার ক্ষেত্রে জাদুঘরটিতে অতিরিক্ত দর্শানার্থীর ভিড়ও একটি বড় চ্যালেঞ্জ, যা দিন দিন বাড়ছে। গত বছর প্রায় ৮৭ লাখ মানুষ ল্যুভর জাদুঘর দেখতে গেছেন বলে জানা গেছে। ফলে অতিরিক্ত ভিড়ের চাপ সামলাতে কর্মীদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। সূত্র: আল জাজিরা

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved bijoykantho© 2025